লিডিং ইউনিভার্সিটিতে নবনির্মিত শহিদ মিনার উদ্বোধন

সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটিতে নবনির্মিত শহিদ মিনার উদ্বোধন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রæয়ারি ২০২০) সকাল সারে ৯টায় ৫২টি ভাষার “মা” শব্দ খচিত শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন তিনি।
সিলেট শহরের উপকন্ঠে প্রকৃতির ছায়াঘেরা অপার সৌন্দর্যে ভরপুর রাগীব নগরে অবস্থিত লিডিং ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি বলেন, একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নির্মিত হয়েছে এ শহিদ মিনার। বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী ও আঞ্চলিক উচ্চারণে মা শব্দটি স্থাপনের মাধ্যমে সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সকল মাটির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এটি আমাদের মনকে প্রসারিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি নির্মাণশিল্পী লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাসকে সুন্দর নকশার মাধ্যমে মায়ের ভাষাকে সম্মান প্রদর্শন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সকল ক্ষেত্রে আমরা একসাথে মিলে কাজ করে যাচ্ছি, যা আমাদেরকে বিশ্বমঞ্চে উদ্ভাসিত হবার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে বীর শহিদদের স্মরণ করে বলেন, সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে তাহলে ১৯৫২ এবং ১৯৭১ সালের মতো দেশের মর্যাদা রক্ষা এবং উন্নয়নে আমরা আমাদের মতো করে সবকিছু নির্মাণ করতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, দানবীর রাগীব আলী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার মধ্যে লিডিং ইউনিভার্সিটি অন্যতম। এখানে শিক্ষার্থীরা মানবিক এবং বিজ্ঞানে সমানতালে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সুন্দর পরিবেশে শিক্ষালাভের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী বলেন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা শহিদদের রক্তের ঋণ আমরা কোনদিন শোধ করতে পারব না। তাঁদের আতœত্যাগের বিনিময়েই আজ আমরা স্বাধীন দেশে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছি এবং মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি। তাই সমগ্র জাতির সাথে লিডিং ইউনিভার্সিটি পরিবার প্রতিবছর ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস, বাংলার কৃষ্টি-কালচার ও ঐতিহ্যকে ভবিষ্যত সমাজ ব্যবস্থার দিক নির্দেশনা হিসেবে নিতে এবং বর্তমান তরুণ সমাজকে বিপদগামীতা থেকে রক্ষা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদেরকে উদ্ভূদ্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পদচারন এই এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
লিডিং ইউনিভার্সিটিতে এসে শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহিত করার জন্য মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতেও এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তাঁকে পাশে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শহিদ মিনারে অনেক ভাষায় ‘মা’ শব্দ বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদার প্রতিকৃতি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে লিডিং ইউনিভার্সিটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধ পরিকর।
শহিদ মিনার ‘মা’
নির্মানের পেছনের স্থাপত্য ভাবনা:
আমরা ভাষাভিত্তিক জাতি। বাংলা থেকেই বাঙালী। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রæয়ারি বাঙারী জাতির চোখ ফোটেছিল। পন্ডিত “হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রæয়ারি ২০ তারিখে যে শুধুই হিন্দু বা মুসলিম ছিল ২১ শে ফেব্রæয়ারিতে সে বাঙালীতে পরিনত হয়।” তাই তিনি বলেছেন, ‘২১শে ফেব্রæয়ারি আমাদের অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস। কারন ঐদিন আমরা আত্ম আবিস্কার করেছিলাম। মায়ের ভাষার যে সংগ্রামের চেতনা, ৭১ এ স্বাধীনতার মূল শক্তি ছিল। ভাষা আমাদের মাতৃস্বরূপা, একইভাবে দেশ-মাতৃকা।আমাদের মা-মাটি-ভাষা একাকার। এই শহিদ মিনার রচিত হয়েছে সেই ‘মা’ কে কেন্দ্র করেই। কেন্দ্রে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের অর্ধশতাধিক বংসর প্রাচীন প্রতীকের রূপ নিয়ে আর তাকে ঘিরে, তার চারিপাশে কত শত সন্তানের ‘মা’ ডাকের কলরব। মাতৃরূপের, মাতৃভাষা বিশ্বজনিনতা চিরন্তর। বাংলাভাষা আজ মধুরতম ভাষা। ২১ শে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অভিসিক্ত। বাংলা ছাড়াও আামাদের দেশে বসবাসকারী অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠির নিজস্ব হরফে ‘মা’ শব্দটি এ মিনারের শরীওে অলংকার হয়ে আছে। এ ছাড়াও ইতিহাসের পথের বাঁকে বাংলাভাষা অন্য যে ভাষারই সাক্ষাৎ পেয়েছে, স্পর্শ পেয়েছে সে ভাষাগুলোর ‘মা’ শব্দটি ও এখানে উচ্চারিত হচ্ছে। তাই এ শহিদ মিনারের একটিই নাম – – অবিকল্প নাম:
‘মা’

লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী মো. জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলা ও আধুনিক ভাষা অনুষদের ডীন প্রফেসর নাসির উদ্দিন আহমেদ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক, আধুনিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. এম. রকিব উদ্দিন, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সচিব মেজর (অব.) শায়েখুল হক চৌধুরী, রেজিস্ট্রার মেজর (অব) মো. শাহ আলম, পিএসসি, প্রক্টর মো. রাশেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.