অ্যাগ্রো-রোবটিক সিষ্টেম আবিষ্কার করল লিডিং ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী

মানুষের হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই মাঠ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করা যাচ্ছে। টমেটো, আপেল, ষ্ট্রবেরীসহ নানা রকম ফল অল্প সময়ের মধ্যে নিয়ে আসছে রোবট বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। এমনকি সঠিক মাত্রায় পেকেছে কি না তা ও পরখ করে নিচ্ছে রোবটটি ফল তোলার আগে। রোবটি মাঠ ও আবহওয়ার রেকর্ডও তৈরী করছে। কীটপতঙ্গ দমন করতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়ে গিয়ে মাঠে কীটনাশক স্প্রে করছে, না এটি কোনো অবসর সময়ের কল্পনা নয়, গল্পও নয়। এটি একটি বাস্তব ঘটনা। আর সেই বাস্তব ঘটনার রোবটি তৈরী করেছেন সিলেটের বেসরকারী লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রিনিক বিভাগের তিন তরুন শিক্ষার্থী। তারা হলেন মো: আবু বকর সিদ্দিক, প্রিয়াংকা দাস ও মৌ দেব। তাদেও সার্বিক তত্তাবধানে ছিলেন লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মৃণাল কান্তি ধর। তারা তৈরী করেছেন প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাগ্রো-রোবটিক সিস্টেম। যা দিয়ে একই সঙ্গে কৃষিক্ষেত্র শনাক্তকরণ, পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যাও কাজ করা যাবে।
রোবটি বাজারজাত হলে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে মন্তব্য করে শিক্ষার্থী মো: আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নের কথা আমরা সবাই বলি। কিন্তু আজও এই ক্ষেত্রটি উপেক্ষিত। আর সেই ভাবনা থেকে এই রোবটি তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারা এ নাম দিয়েছেন অ্যাগ্রো-রোবটিক সেস্টিম। ওয়্যারলেস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে তৈরী করা হয়েছে এই যন্ত্রমানব ব রোবট।

এই সিস্টেমের তিনটি উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে। প্রথমেই আছে একটি ফল সংগ্রহকারী অ্যাগ্রো-রোবট, যা পাকা ফল শনাক্ত ও সংগ্রহ করতে সক্ষম। এর জন্য এক সঙ্গে আছে একটি ক্যামেরা সিস্টেম, যা দূরবর্তী একটি কন্ট্রোল প্যানেলে ভিডিও ফুটেজ পাঠায়। কন্ট্রোল প্যানেলে তাদের তৈরীকৃত সিমুলেটর সফ্টয়্যাটি লাল রং নির্ণয় করার মাধ্যমে পাকা ফল শনাক্ত করে। এরপর স্বয়ংক্রীয়ভাবে ফলের লোকেশন ওয়্যারলেস সেস্টেমের মাধ্যমে রোবটের কাছে পাঠিয়ে দেয়। রোবটি তখন একটি কাটারের মাধ্যমে ফলটিতে গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত একটি ঝুড়িতে সংগ্রহ করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩০ সেকেন্ড সময় লাগে। দ্বিতীয় অংশটি একটি কীটনাশক প্রয়োগকারী কোয়াড কপ্টার।কন্ট্রোল প্যানেলে পৌঁছানো ভিডিও তে যদি দেখা যায়, ফসল কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তখন অপার্টের কন্টোল প্যানেল থেকে মাঠের উপর একটি কোয়াড কপ্টারের মাধ্যমে কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে পারবে। সিস্টেমটির তৃতীয় অংশ হলো একটি স্বয়ংক্রিয় সেট পাম্প। ফসলের মাঠে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচের জন্য কন্ট্রোল প্যানেল অনবরত বাতাসের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও মাটিতে পানির পরিমাণের তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। তারপর এই তথ্যগুলোকে প্যানেলটি তার নিজস্ব ডাটাবেসের তথ্যেও সঙ্গে তুলনা করে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে এবং একাই সঙ্গে একটি সমীকরণের মাধ্যমে সেচ পাম্পটি কতক্ষণ চালু থাকবে তা নির্ধরণ করে। প্রক্রিয়াটিকে আরও নিখূঁত করার জন্য একটি ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট তৈরী করা হয়েছে, যেখানে কৃষিবিষয়ক তথ্য পূর্বেই জমা করে রাখা আছে। কোনো কারনে যদি কন্ট্রোল প্যানেল তার নিজস্ব ডাটাবেসের তথ্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তবে সেটি সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করে। এই সম্পূর্ণ সিস্টেমটিকে তৈরী করতে তাদের দীর্ঘ পাঁচ মাস সময় লেগেছে এবং এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার টাকা, জানালেন আবুবকর সিদ্দিক।
এ বিষয়ে লিডিং ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদেও এমন আবিষ্কার আমাদেও গৌরাবন্বিত করেছে। তারা যেভাবে গবেষণা করে অ্যাগ্রো-রোবটটি আবিষ্কার করেছে এজন্য আমি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানাই।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.